শিরোনাম
Passenger Voice | ০৫:৪৫ পিএম, ২০২২-০২-০৮
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দেশের যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মরত সংগঠন যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সহ-সভাপতি কুড়িগ্রামের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব এডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকনকে সমাজসেবায় অনন্য অবদান রাখার জন্য একুশে পদক- ২০২২ মনোনিত করা হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠান শাখা কর্তৃক স্বাক্ষরিত সাম্প্রতিক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিককে ২০২২ সালের একুশে পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সেই তালিকায় রয়েছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের এই শীর্ষ নেতা কুড়িগ্রামের কৃতি সন্তান এডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকন। সমাজসেবায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য তাকে নির্বাচিত করা হয়। বরেণ্য এ ব্যক্তিকে একুশে পদকে মনোনিত করায় খুশি কুড়িগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ। গত বৃহস্পতিবার এ খবর ছড়িয়ে পরলে তার বাসভবন লিংকন ইনসে ভীড় জমায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
এডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকন এর জীবনবৃত্তান্ত: তিনি কুড়িগ্রাম পৌরসভার নাজিরা ব্যাপারী পাড়ায় ১৯৬৬ সালের ১৪ নভেম্বর জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মৃত: মহিউদ্দিন ব্যাপারী। তিনি একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা। মাতা মৃত: আমেনা বেগম। ৭ ভাই ১ বোনের মধ্যে তিনি ৫ম সন্তান। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত, তার স্ত্রী অধ্যাপক শামসুন নাহার বেগম সুইটি কলেজে শিক্ষকতা করেন এবং একমাত্র সন্তান সিদ্ধার্ধ অস্টেলিয়ায় পড়াশুনা করছে।
তিনি একাধারে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, আইনজীবী, লেখক, কলামিস্ট ও শিক্ষক। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি, কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ, পাবলিক প্রসিকিউটর এবং সমাজকর্মী। তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ও এশিয়াটিক সোসাইটির গবেষক। তিনি বাংলা একাডেমির উদ্যোগে প্রণিত মুক্তিযুদ্ধ ও আ লিক ইতিহাস নিয়ে লেখা ১৫টি গ্রন্থের লেখক।
তাঁর উল্লেখযোগ্য পুস্তক হচ্ছে- ১৯৭১ ঃ ইপিআরের সেইসব যোদ্ধাগণ, উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন, মুক্তিযুদ্ধের আ লিক ইতিহাসঃ রংপুর, মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস কুড়িগ্রাম জেলা, আইন আদালতের বিকাশ, কাব্যগ্রন্থ-ভাওয়াইয়ার স্বরে বঙ্গবন্ধু, জলেশ্বরীর ভূমিপুত্র, শেষ যুদ্ধের ডাক দিয়ে যাই, সম্পাদনাগ্রন্থ- একাত্তরের অগ্রদূত, শামসুন নাহার চৌধুরী, জীবন মৃত্যুর মাঝখানে, যৌথগ্রন্থ- রঙ্গপুরের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষসহ অনেক পুস্তক।
শৈশব থেকে পারিবারিক পরিমন্ডলে রাজনীতির হাতেখড়ি নেন। কখনো মৌলবাদ কখনো স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে জেল খেটেছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় ছাত্র সংসদ-রাকসুর এজিএস ও সিনেটে সর্বোচ্চ ভোটে সদস্য নির্বাচিত হন। ছাত্র জীবন শেষে কুড়িগ্রামে এসে আইন পেশায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৯২ সালে কুড়িগ্রাম আইন কলেজ প্রতিষ্ঠায় তিনি উদ্যোগি হন। এই কলেজে তিনি তিন দশক ধরে অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। এ দায়িত্ব পালনের জন্য গত ত্রিশ বছরে বেতন বা সম্মানি হিসেবে তিনি এক পয়সাও না নিয়ে দেশে ইতিহাস গড়েছেন।
সীমান্তে আলোচিত ফেলানি হত্যা মামলা:
আলোচিত এই মামলায় তিনি আইনজীবী হিসেবে আন্তর্জাতিক বিবেককে জাগ্রত করেন। এখনো তিনি ফেলানীর অন্যয্য বিচারের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন। তিনি দুই দেশের নাগরিক যারা পারাপার হতে গিয়ে জেলখানায় আটক হন তাঁদের আইনী সহযোগিতার জন্য গড়ে তুলেছেন বর্ডার ভিকটিমস রেসকিউ লিগ্যাল এসিসট্যান্স ফোরাম। যেটির বাংলাদেশ পার্টের প্রধান তিনি আর ভারতের প্রধান প্রখ্যাত মানবাধিকার সংগঠক কিরিটী রায়।
আব্রাহাম লিংকন নিজেকে ছিটমহলবাসীর আন্দোলনে নিয়োজিত করেন। ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনে তিনি উভয়দেশের সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা হন। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট ছিটমহল বিনিময়ের দিন বাংলাদেশের থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ভারতের মশালডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত মূলসভায় অংশগ্রহণ করেন। বিনিময়ের পর একটি নির্ভূল তালিকা ও জমি জমা সংক্রান্ত বিষয়ে একটা তালিকা প্রণয়ন করে আইন মন্ত্রণালয়কে তিনি হস্তান্তর করেন। ছিটমহলে সংগ্রাম ও মুক্তি নামে তাঁর একটি গ্রন্থও রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জল ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ২০১২ সালে নিজ বাসভবণে গড়ে তোলেন “উত্তরবঙ্গ যাদুঘর”। নিজ বাড়ির ড্রইংরুম, বারান্দা, শোবার ঘর, পাঠকক্ষসহ সর্বত্রই এই জাদুঘরের স্মারকগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
এখানে খেতাবপ্রাপ্ত ও খেতাবহীন মুক্তিযোদ্ধাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী, যুদ্ধে ব্যবহহৃত গুলি ও গ্রেনেডের বাক্স, যুদ্ধকালিন সময়ে কুড়িগ্রাম-ভারত ব্যাংকিং যোগাযোগের দলিলপত্র ও জ্বালিয়ে দেয়া ঘরবাড়ির তালিকাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্মারক এবং ৫ হাজার ৮৬৫জন রাজাকারের তালিকা রয়েছে। এখানেই সংরক্ষিত রয়েছে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কফিনসহ ব্যবহার্য সামগ্রি।
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই জাদুঘরটি। দিনে দিনে মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসের দুর্লভ স্মারকে সমৃদ্ধ হচ্ছে বৃহত্তর রংপুরের অন্যতম বাতিঘর উত্তরবঙ্গ যাদৃঘর। এখানে ছুটে এসেছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, বিচারপতি, পদস্থ কর্মকর্তা ও গবেষকরা। নিজের দানকৃত ১৮শতক জমিতে বর্তমানে ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারি উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে জাদুঘরের নতুন ৪ তলা ভবন।
একুশে পদক পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় আব্রাহাম লিংকন জানান, মুক্তিযুদ্ধ ও আ লিক ইতিহাস নিয়ে অনেক দিন ধরে কাজ করছি। বিচারক মন্ডলিকে ধন্যবাদ তৃণমূলে থাকলেও তারা আমার কাজের মূল্যায়ন করেছেন। এই সম্মান আমাকে দেশ ও সমাজের জন্য আরো বেশি কাজ করার জন্য দায়বদ্ধ করলো।
তিনি এই পদকের অর্থ নতুন প্রজন্মের ইতিহাস অনুসন্ধানের স্বার্থে উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে দান করবেন বলে জানান।
যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিএম কামরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধরী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই দেশের তৃণমূলে যারা সামাজিক কর্মকান্ড করে সোনার বাংলা গড়ার চেষ্টা করছেন তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে মূল্যায়ন করে দেশ ও সমাজ সেবায় উৎসাহিত করার জন্য।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.